বেকারত্ব নিরসন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর
ভূমিকাঃ- যেকোন দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের সুশৃঙ্খল কর্মক্ষম ও দক্ষ যুব শক্তির উপর। ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে যুব হিসেবে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যা প্রায় ৪ কোটি। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোত ধারার বাইরে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই দেশের এ সম্ভাবনাময় ও অফুরন্ত প্রাণ শক্তির অধিকারী যুব দেরকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সরকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মত উল্লেখযোগ্য কর্মসূচী সমূহ বাস্তবায়ন করেছে।
আমাদের দেশের শিক্ষিত যুব সমাজের অধিকাংশ বেকারত্বে ভূগছে। এই দেশের অন্যান্য উপজেলার মত কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলাতেও অসংখ্য শিক্ষিত বেকার যুব এবং যুব মহিলা রয়েছে। এ উপলব্ধি থেকেই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, কুমারখালি, কুষ্টিয়া এই উপজেলার যুব সমাজের বেকরাত্ব নিরসন করে স্বাবলম্বী এবং আত্মকর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যুবদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে। তারপর বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান স্ব স্ব ট্রেডে প্রকল্প গ্রহনের জন্য ঋণ সহায়তা সহ সর্বাত্মক পরামর্শ দিয়ে আসছে। পরিত্যক্ত ডোবা/পুকুর সংস্কার করে সেখানে মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এভাবে আত্মকমসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয় সম্পদ আহরণ এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করনে পরামর্শ প্রদান করছে।
এছাড়াও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উপকারভোগীদের পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যদেরকে নিয়ে গ্রুপ গঠন করে তাদেরকে পরিবার পরিকল্পনা, স্যানিটেশন, বৃক্ষরোপণ, ছেলে-মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠানো, জন্ম নিবন্ধন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, গর্ভবতী মা ও শিশুর পরিচর্যা, টিকাদান এবং HIV/AIDS এর কুফল এবং প্রতিরোধ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ফলে প্রশিক্ষিত যুব, যুব মহিলা এবং যুব সংগঠকবৃন্দ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়েছে। যেমনঃ-বৃক্ষরোপণ, বিনামূল্যে চারা বিতরণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, মেয়েদের সেলাই শেখানো, স্থানীয় রাস্তাঘাট নির্মান ইত্যাদি।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, কুমারখালি, কুষ্টিয়ার মাধ্যমে যে সকল বিষয়ে যুবরা প্রশিক্ষণ গ্রহন করে থাকে সে সকল বিষয়ের নাম নিম্নের তালিকায় দেখানো হল।
ক্রমিক নং |
কোর্সের নাম |
মেয়াদ |
বয়স |
শিক্ষাগত যোগ্যতা |
১ |
গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালন সহ উহাদের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং মৎস্য চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্স |
৩ মাস |
১৮-৩৫ |
৮ম শ্রেণী |
২ |
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স |
৪ মাস |
১৮-৩৫ |
এইচ,এস,সি |
৩ |
রেডিও, টিভি, ভিসিপি, ভিসিআর প্রশিক্ষণ কোর্স |
৪ মাস |
১৮-৩৫ |
এস,এস,সি |
৪ |
এয়ার কন্ডিশনিং এন্ড রেফ্রিজারেশন প্রশিক্ষণ কোর্স |
৪ মাস |
১৮-৩৫ |
এস,এস,সি |
৫ |
ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউজ ওয়ারিং প্রশিক্ষণ কোর্স |
৪ মাস |
১৮-৩৫ |
৮ম শ্রেণী |
৬ |
ব্লক, বাটিক প্রিন্টিং প্রশিক্ষণ কোর্স |
৬ মাস |
১৮-৩৫ |
৮ম শ্রেণী |
৭ |
মৎস্য চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্স |
১ মাস |
১৮-৩৫ |
৮ম শ্রেণী |
৮ |
উল নেটিং প্রশিক্ষণ কোর্স |
৪ মাস |
১৮-৩৫ |
৮ম শ্রেণী |
৯ |
পোশাক তৈরী প্রশিক্ষণ কোর্স |
৪ মাস |
১৮-৩৫ |
৮ম শ্রেণী |
১০ |
ষ্টোনো টাইপিং প্রশিক্ষণ কোর্স |
৬ মাস |
১৮-৩৫ |
এইচ,এস,সি |
১১ |
দপ্তর বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স |
১ বছর |
১৮-৩৫ |
এইচ,এস,সি |
১২ |
ইলেকট্রনিক্স (মোবাইল সার্ভিসিং সহ) |
৬ মাস |
১৮-৩৫ |
এস,এস,সি |
১৩ |
ভ্রাম্যমান/ব্যবসায় যুব প্রশিক্ষণ কোর্স |
৭-৩০ দিন |
১৮-৩৫ |
পঞ্চম শ্রেণী |
উপর্যুক্ত বিষয় গুলি ছাড়া ও বর্তমানে যুবদেরকে দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আধুনিক অফিস ব্যবস্থাপনা, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, বিদেশী ভাষা শিক্ষণ, হারবাল মেডিসিন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ১৯৯৬ হতে জুন / ২০১৩ খ্রিঃ পর্যন্ত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, কুমারখালি কার্যালয় হতে ৭৮১১ জনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের তালিকা নিম্নরূপঃ-
প্রশিক্ষণের নাম |
পুরুষ |
মহিলা |
মোট |
আত্মকর্মঃ অপ্রাতিষ্ঠানিক |
২৫৩৮ |
২৭২০ |
৫২৫৮ জন |
প্রাতিষ্ঠানিক |
২৮২ |
৫১ |
৩৩৩ জন |
উদ্যেক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ |
৮৬১ |
৯৫৯ |
১৮২০ জন |
কর্মসংস্থান ও আত্নকর্মসংস্থান প্রকল্প |
২৫৫ |
১৪৫ |
৪০০ জন |
মোট= |
৩৯৩৬ |
৩৮৭৫ |
৭৮১১ জন |
তবে বর্তমানে যুব প্রশিক্ষণের অবস্থা খুবই নাজুক। কারণ প্রশিক্ষণ চলাকালে প্রশিক্ষনার্থীদের জন্য কোন প্রশিক্ষণ ভাতার ব্যবস্থা না থাকায় বেকার যুব সমাজ প্রশিক্ষণ বিমুখ হয়ে পড়েছে। বস্ত্ততঃ আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উপর্যুক্ত প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি তথা বেকারত্ব নিরসনে প্রশিক্ষণ ভাতার ব্যবস্থা সহ বাস্তব ভিত্তিক সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ পরিচালনার প্রতি সরকারের সজাগ দৃষ্টি দিয়া অত্যাবশ্যক।
প্রশিক্ষণোত্তর যে সকল প্রশিক্ষিত যুবরা স্ব স্ব ট্রেডে প্রকল্প গ্রহন করে এবং নিজ অর্থায়নে প্রকল্পের ২০% কাজ সফলভাবে সম্পূর্ন করে। তাদেরকে প্রকল্প সম্প্রসারণের জন্য ১০% সরল সুদে ২ বছর ও ১ বছর মেয়াদে, মাসিক ও সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ঋণ সহায়তা দেয়া হয়। ঋণের ধরন নিম্নরূপঃ-
আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচীঃ-এই কর্মসূচীতে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঋণ প্রদান করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে ৬০,০০০/= (ষাট হাজার) টাকা হইতে ১,০০০০০/= (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত প্রশিক্ষিত যুবদের মাঝে ঋণ প্রদান করা হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে ৪০,০০০/= (চল্লিশ হাজার) টাকা হইতে ৬০,০০০/= (ষাট হাজার) টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়। প্রথম তিন মাস গ্রেস পিরিয়ড এবং পরবর্তী ২৪ মাসে সমান ২৪টি কিস্তিতে আসল টাকা সার্ভিসচার্জসহ পরিশোধ যোগ্য।
পরিবার ভিত্তিক কর্মসংস্থান কর্মসূচীঃ-ভূমিহীনতা এবং স্বল্প ভূমির জনসংখ্যার আধিক্য শুধু বেকারত্বই বৃদ্ধি করে না। একই সাথে সামাজিক ভারসাম্য ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিঘ্নিত করে। এ প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সাল থেকে ভেড়ামারা সহ দেশের ৮২টি উপজেলায় এই কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে। এই কার্যক্রমে ভূমিহীন দরিদ্র জনসাধারনকে একত্র করে প্রায় ২৫ জন থেকে ৫০ জন কে প্রশিক্ষণ প্রদান করে গ্রুপ ও কেন্দ্রে অন্তর্ভূক্ত করে বিভিন্ন ট্রেডে ঋণ বিতরণ করা হয়। প্রথম ২ সপ্তাহ গ্রেস পিরিয়ড এবং পরবর্তী ৫০ সপ্তাহে সমান ৫০টি কিস্তিতে আসল পরিশোধ হবে। আসল পরিশোধের পর অর্থাৎ ৫৩ ও ৫৪ তম সপ্তাহে সার্ভিস চার্জের টাকা সমান ২ কিস্তিতে পরিশোধ হবে। এখানে ঋণের পরিমান প্রথম বছর ৮ হাজার দ্বিতীয় বছর ১০ হাজার, তৃতীয় বছর ১২ হাজার, চতুর্থ ১৪ হাজার ও পঞ্চম বছর ১৬ হাজার টাকা মাথাপিছু। পরিবারের কর্মক্ষম ৫ জন সদস্য নিয়ে গ্রুপ গঠন করা হয়।
পাতা
ক্রমিক নং |
সেবা/সেবাসমূহ |
সেবা গ্রহীতা |
সেবা গ্রহীতার করণীয় |
সেবা প্রদানকারীর করণীয় |
নিষ্পত্তির জন্য সম্ভাব্য সময় |
মন্তব্য |
০১। |
২ মাস ১৫ দিন মেয়াদী গবাদী পশু, হাঁস-মুরগী পালন, মৎস চাষ ও কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ (আবাসিক) |
৮ম শ্রেণী পাশ ১৮-৩৫ বয়সী বেকার যুব |
জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত শর্তাদি পূরণ সাপেক্ষে আবেদন করা |
প্রাপ্ত আবেদন সমূহ বাছাই পূর্বক নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন করে জেলা কার্যালয়ে প্রেরণ। |
বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত সময়কাল। |
|
২। |
পোষাক তৈরী, মৎস্যচাষ বেকার যুবদের কারিগরি প্রশিক্ষণ (কম্পিউটার) অবশিষ্ট কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রকল্প (ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড হাউজওয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশন) অনাবাসিক |
১৮-৩৫ বয়সী (ট্রেড ভেদে ৮ম শ্রেণী হতে এইচ,এস,সি পর্যন্ত পাশ) বেকার যুব। |
জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত শর্তাদি পূরণ সাপেক্ষে আবেদন করা |
বিভিন্ন ট্রেড সম্পর্কে ধারণা প্রদান পূর্বক জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর আবেদন করার পরামর্শ প্রদান। |
বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত সময়কাল। |
|
৩। |
অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কোর্স |
১৮-৩৫ বয়সী বেকার যুব |
প্রশিক্ষণ গ্রহণের নিমিত্তে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বরারর আবেদন করা। |
প্রতি অর্থ বছরে ২৪০ জনকে (৩০-৩৫ জনের ব্যাচ) স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ আয়োজন ও সম্পন্ন করা। |
সাধারণতঃ আবেদনের ১৫দিনের মধ্যে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। |
|
৪। |
যুব সংগঠন তৈরী ও রেজিষ্ট্রেষণ করণ |
স্থানীয় যুবদের সংগঠন। |
১৮-৩৫ বছর বয়সী যুবরা সংগঠিত হয়ে উপজেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করা । |
সংগঠিত যুবদেরকে যুব সংগঠন তৈরীতে এবং রেজিষ্ট্রেষণ করণে যাবতীয় সহায়তা প্রদান। |
যুক্তিযুক্ত সময়কালের মধ্যে। |
|
৫। |
প্রাতিষ্ঠানিক/অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ |
প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ১৮-৩৫ বছর বযসী বেকার যুব |
নির্ধারিত ফরমে যথাযথ ভাবে আবেদন করতে হবে। |
প্রাপ্ত আবেদন পত্র অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে উপজেলা ঋণ কমিটি, প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে জেলা ঋণ কমিটির কাছে প্রেরণ এবং ঋণ অনুমোদনের পর ঋণের চেক প্রদান করা হয়। |
১৫(পনের) দিনের মধ্যে |
|
৬। |
উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্প |
১৮-৩৫ বয়সী বেকার যুব |
কর্ম এলাকা ভুক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিবাসী হতে হবে। |
প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক |
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস